দিনটা রোববার। এবং স্বাগতিক রাশিয়ার খেলা স্পেনের বিপক্ষে। সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের বিপক্ষে খেলা বটে কিন্তু রাশিয়ার জন্য এটা চলমান বিশ্বকাপ উৎসবের মাঝে আরো বড় এক পার্বনের মতো।
কারণ, দিনটা ছুটির। রোববার। আরেকটি কারণ তো সবার জানা। নিজেদের আয়োজিত প্রথম বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড রুশ ফুটবল দল পেরুতে পারবে কি না তাই নিয়ে তাদের দেশবাসীর মধ্যেই ছিল মহা-সংশয়। প্রথম দুই ম্যাচেই সেই সংশয় কাটিয়ে এখন তারাই কিনা কোয়ার্টার ফাইনালের লড়াইয়ে নামল!
ঘোর লাগা চোখে রুশরা এর চেয়ে বেশি কিছু পেলে সেটাকে বোনাস হিসেবে নেবে হয়তো, কিন্তু ২০১০ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন স্পেনের জন্য আরেকটি বিশ্ব শিরোপা জিততে এটি আরেকটি বড় এবং নক আউট ধাপ পেরুনোর লড়াই। বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে শেষ ষোলর এই ম্যাচটি।
স্পেন অবশ্য বিশ্বকাপ কিংবা ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে স্বাগতিকদের বিপক্ষে আটবারের মুখোমুখি লড়াইয়ে কখনোই জিততে পারেনি। এমনকি দক্ষিণ কোরিয়ার কাছেও হেরেছিল। রাশানদের কাছে এটা তো অনেক বড় প্রেরণাই হতে পারে!
এই ম্যাচে স্প্যানিয়ার্ড বোচ ফার্নান্দো হিয়েরো গ্রুপপর্বে খেলা শেষ ম্যাচের একাদশে তিনটি পরিবর্তন এনেছেন। নাচো ফিরে এসেছেন রাইট ব্যাকে, কারভায়ালের জায়গায়। কোকে ও আসেনসিও মাঝমাঠে ফিরে এসেছেন ইনিয়েস্তা ও আলকানতাতার জায়গায়। ওদিকে রাশিয়া এই ম্যাচে পুরানো ৫-৩-২ ফরম্যাটে ফিরে গেছে। রাশিয়ার একটি দৈনিকের এদিনের শিরোনাম ‘আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ আজ’।
ঠিক আগের দিন নক আউট পর্বের প্রথম দিনের খেলায় এই মহা বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই খেলোয়াড় ও তার দল ছিটকে পড়েছে। পঁচা শামুকে পা কাটেনি তাদের। লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা এবং ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালের বিদায় হয়েছে যথাক্রমে ফ্রান্স ও উরুগুয়ের কাছে হেরে। তার আগে ২০১৪ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জার্মানি গ্রুপ পর্ব থেকেই আউট।
দুইবারের চ্যাম্পিযন আর্জেন্টিনা, চারবারের বিশ্বসেরা জার্মানি এবং বর্তমান ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নদের বিদায়ে সামনের পথ স্পেনের জন্য অপেক্ষাকৃত কম কণ্টকমুক্ত। কিন্তু ম্যাচটা বিশ্বকাপের বলে সামান্য মনোযোগ হারানোর সুযোগ নেই। স্বাগতিকদের বিপক্ষে এমন আসরের ইতিহাসও তো তাদের পক্ষে না।
রাশিয়া এবারের বিশ্বকাপ শুরু করেছিল দুর্দান্তভাবে। প্রথম দুই ম্যাচে ৮ গোল করেছিল। শেষ ম্যাচে বাজেভাবে হেরেছে। ‘এ’ গ্রুপের দলটি ৩ ম্যাচে ২ জয় ও ১ হার নিয়ে গ্রুপ রানার্স আপ হিসাবে নক আউট পর্বে উঠেছে। তাও ১৯৮৬ সালের পর। প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে জিতেছে ৫-০ গোলে।
মিসরের সাথে ৩-১ গোলে জিতেছে এরপর। উরুগুয়ের কাছে অবশ্য ৩-০ গোলে হেরেছে। অন্যদিকে ৩ ম্যাচে ১ জয় ও ২টি ড্র নিয়ে ‘বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন দল স্পেন। প্রথম ম্যাচে পর্তুগালের সাথে ৩-৩ গোলে ড্র করে তারা। দ্বিতীয় ম্যাচে ইরানের বিপক্ষে জেতে ১-০ গোলে। আর শেষ ম্যাচে মরক্কোর সাথে ২-২ গোলে ড্র করেছিল।
এবারের আসরে দারুণ গোল ক্ষুধা নিয়ে খেলছে রাশিয়া। ৩ ম্যাচে তিন গোল করে শীর্ষ গোলদাতাদের তালিকায় আছেন রাশিয়ান মিডফিল্ডার ডেনিস চেরিশিভ। এছাড়া গোলের মধ্যে আছেন আর্টেম জুবা (২ গোল, ১ অ্যাসিস্ট) ও আলেক্সান্ডার গলোভিন (১ গোল, ২ অ্যাসিস্ট)। অন্যদিকে স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড দিয়েগো কস্তা আছেন দারুণ ফর্মে। ৩ ম্যাচে তিনি গোল করেছেন ৩টি। এছাড়া একটি করে গোল পেয়েছেন ইস্কো, নাচো ও ইয়াগো আসপাস।
বিশ্বকাপে এবারই প্রথম দেখা হচ্ছে দুই দলের। তবে এর আগে ৬ বার মুখোমুখি হয়েছিল স্পেন ও রাশিয়া। এর মধ্যে চারবারই জিতেছে স্পেন। ২টি ম্যাচ ড্র হয়েছিল। তার মানে স্পেনকে কখনোই হারাতে পারেনি রাশিয়া। এবার দেশের মাটিতে বিশ্বকাপের আসরে স্পেনকে হারাতে পারবে কি রাশিয়া? নাকি স্পেন অপরাজেয়ই থেকে যাবে রাশানদের কাছে?





