কুমিল্লা
সোমবার,৩ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৮ কার্তিক, ১৪৩২ | ১১ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭

পরিবর্তনের পথে বাংলাদেশ: নতুন আশা, নতুন সম্ভাবনা

‘গোলাভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছ’ খ্যাত বঙ্গোপসাগর বিধৌত এই ব-দ্বীপটি বারবারই পর্যদুস্ত হয়েছে দেশী- বিদেশী নানা শক্তির কাছে।
প্রায় ২০০ বছরের ঔপনিবেশিক শাসন, ৪৭ এর ধর্ম ভিত্তিক দেশ বিভাজন আর একাত্তরের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতার সংগ্রাম এই ভূখণ্ডের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এরমধ্যে ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণে সবচেয়ে বেশি আলোচিত অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত। একথা বলা প্রাসঙ্গিক যে বীর বাঙ্গালী সবসময়ই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে এবং বারবার ইতিহাসের সোনালী অধ্যায়ে তাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিয়েছে।

শোষণ আর নানা নির্যাতনের শিকার হয়ে বরাবরের মতই তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছে মুক্তির সংগ্রামে। ১৯৭১ সালের কালো রাত্রিতে ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যার পরে বাঙ্গালী জাতি যখন একজন নেতার স্বশরীরে নির্দেশনার অপেক্ষায় হতাশ আর কিংকর্তব্যবিমূঢ়, ঠিক তখনই একজন অকুতোভয় বাঙ্গালী সেনা কর্মকর্তা WE REVOLT বলে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছেন প্রশিক্ষিত হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। তাঁর কন্ঠে উচ্চারিত স্বাধীনতার ঘোষণা আর প্রতিরোধের ডাকে হানাদার বাহিনীর রক্তের হোলি খেলা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। নয় মাসের আত্মত্যাগ আর সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে বাঙ্গালী তার কাঙ্খিত স্বাধীনতা লাভ করে। সন্ত্রাস, দুর্নীতি, একদলীয় শাসন, বাক্ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণের মাধ্যমে সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশের মানুষের স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন ভেঙে চূরমার করে দেয়া হয়।

দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আবারো সেই বীর সেনানী মুক্তিযুদ্ধের বীর উত্তম জিয়াউর রহমান সিপাহী জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী ঘটনার পরম্পরায় রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। একাত্তরের মতো এ জাতিকে আরেকটিবার মুক্তির স্বাদ দিতে প্রেসিডেন্ট জিয়া তাঁর মেধা, মনন, সততা ও নেতৃত্বের সকল গুণাবলীর সমন্বয় ঘটান। তাঁর হাত ধরেই এদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। ৭৫ পরবর্তী অপার সম্ভাবনাময় এই দেশে শুরু হয় এক নতুন অধ্যায়ের। কৃষি, শিক্ষা, শিল্প ও সংস্কৃতিসহ সকল ক্ষেত্রেই শহীদ জিয়ার অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। টেকসই উন্নয়নের জন্য তিনি ‘স্বনির্ভর বাংলাদেশ’, ‘খাল খনন’ কর্মসূচি এবং অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের জন্য ‘গ্রাম সরকার’ ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিলেন। ‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, আর দলের চেয়ে দেশ বড়’ স্লোগানের মাধ্যমে তিনি সূচনা করেন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ধারণা। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তিনি আত্মমর্যাদা ও সমতার প্রশ্নে আপোষহীন থেকেছেন। সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ নেতা কিভাবে একটি ভঙ্গুর অর্থনীতি আর গণতন্ত্রহীণ দেশকে খাদের কিনার থেকে টেনে তুলতে পারেন তারই প্রকৃত উদাহরণ শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তম।

ইতিহাসের পালা বদলে আমাদের এই দেশটি আরেকবার হোঁচট খায় “আমি তুমি ডামি আর দিনের ভোট রাতে” হওয়ার সরকারের কবলে পড়ে। দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় ধরে দুর্নীতি আর গুম খুনের মাধ্যমে কেড়ে নেয়া হয় মানুষের গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা আর স্বাভাবিক মৃত্যুর অধিকার। আইন, বিচারসহ সকল প্রকার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সমূহকে সুকৌশলে ধ্বংস করা হয়। বিদেশি প্রভুদের সাথে অসমতার চুক্তিতে দেশের প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন আর মর্যাদাকে করা হয় ভূলুন্ঠিত।

অবশেষে ২৪ এর ছাত্র জনতার বুকের তাজা রক্তে রঙিন রাজপথ মাড়িয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় গুম খুনের হোঁতা, ইতিহাসের জঘন্যতম ফ্যাসিস্ট তথাকথিত সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।

ইতিহাসের এই মহান সন্ধিক্ষণে দুর্নীতি আর অপশাসনের ঘূর্ণিপাক থেকে বের হয়ে এগিয়ে যেতে হবে এই দেশটিকে পরিবর্তনের পথে। আর তাইতো নতুন আশা আর নতুন সম্ভাবনার প্রত্যয়ে BBC বাংলার সাক্ষাৎকারে শহীদ জিয়া ও আপোষীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুযোগ্য সন্তান তারেক রহমানের কন্ঠে আমরা নুতন স্বপ্নের আলো দেখতে পাই। আগামী দিনের পরিবর্তনের যাত্রায় তাঁর মতো নেতৃত্ব আমাদের নতুন আশা আর সম্ভবনা দেখায়।

দীর্ঘ প্রায় দুই দশক পর গণমাধ্যমের মুখোমুখি দেয়া সাক্ষাৎকারে দেশপ্রেম, বিনয়, জবাবদিহিতা, ‘অল ইনক্লুসিভ’ দৃষ্টিভঙ্গি, সুশাসন আর জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রতিধ্বনিত হয়েছে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্ঠে। এ যেন এক সামাজিক দায়বদ্ধ নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি। ব্যানেট (Roy T Bennet) তাঁর প্রকাশিত বই ‘The Light in the Heart’ (1916) এ নেতৃত্ব বিষয়ক সংজ্ঞায় লিখেছেন ‘Great leaders create more leaders not followers’ এক্ষেত্রে তারেক রহমানের সাক্ষাৎকারের সাথে তাঁর উদ্বৃত্তিটির যথার্থতা পাওয়া যায়।

বিবিসি তে দেয়া সাক্ষাৎকারটিতে তারেক রহমান প্রমাণ করেছেন যোগ্য পিতার যোগ্য সন্তান হয়ে কীভাবে খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে থাকা দেশটিকে দেখাতে হয় আলোর পথ সাক্ষাৎকারে তাঁর শারীরিক ভাষা, বাচনভঙ্গি আর শব্দচয়নে উঠে এসেছে তাঁর বিনয় আর জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা।

দেড় যুগ ধরে বারবার উচ্চারিত হওয়া ‘আমি/ আমার’ শব্দগুলোর বিপরীতে তাঁর সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে ‘আমরা/ জনগণ’ শব্দযুগল। এইরূপ শব্দ ব্যবহার তাঁর নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টিভঙ্গিকেই প্রকাশ করে যা একজন নেতাকে নিয়ে যায় তাঁর অনুসারীদের সমতলে।

এতদিন ধরে আপনি কথা বলেননি কেন এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যাপারটা বোধহয় এরকম নয়, ব্যাপারটা বোধহয় একটু ভিন্ন। এখানে সতর্কভাবে “বোধহয়” শব্দটি ব্যবহার করে তিনি নিশ্চিতভাবে না বলে প্রশ্নকর্তার প্রতি বিনীতভাবে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন।

অসংখ্য দালাল মিডিয়া ও অপসাংবাদিকতাকে স্মরণ করিয়ে তিনি অত্যন্ত বিনয় আর ভদ্রোচিত ভাষায় বলেন, ‘আমি কথা বলেছি হয়তো আপনারা তখন নিতে পারেননি বা শুনতে পারেননি। ইচ্ছা থাকলেও ছাপাতে পারেননি, হয়তো প্রচার করতে পারেননি। কিন্তু আমি থেমে থাকিনি’। অত্যন্ত সচেতনতা ও বিনয়ের সাথে তিনি বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ ও ব্যক্তির বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেয়ার ঘৃণ্য অনুশীলনকে স্মরণ করিয়ে দেন।

জনগণের অংশগ্রহণ দায়বদ্ধতা, সমতা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রশ্নে তারেক রহমান ছিলেন বরাবরই সোচ্চার।

স্বৈরাচার ও নির্বাচন প্রশ্নে ৫ ই আগস্ট পরবর্তী সংস্কার ও নির্বাচন প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, ভোট কারচুপির সরকার যেমন ফ্যাসিস্টে পরিণত হয় তেমনি ভোটবিহীন সংস্কৃতিও ফ্যাসিস্ট তৈরির পথ সুগম করে দেয়। তিনি মনে করেন ‘প্রকৃতভাবে নির্বাচিত একটি সরকার অবশ্যই জনগণের যে চাওয়া অর্থাৎ জনগণ যেভাবে চায় সে বিষয়গুলো তারা এড্রেস করবে’। সমস্যাকে এড্রেস করলেই রাতারাতি না হোক ধীরে ধীরে সমস্যা কমতে শুরু করবে।

জুলাই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড প্রসঙ্গে নিজেকে একমাত্র মাস্টারমাইন্ড না ভেবে তিনি মনে করেন, ‘কোন ব্যক্তি নয় মাস্টারমাইন্ড হচ্ছে মুক্তিকামী জনতা’। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি কর্মীই সময়ের সাহসী সন্তান এবং তারাই আবার জনগণের নেতা। তাঁর এই বলিষ্ঠ ধ্বনি প্রমাণ করে নেতা হয়ে নয় তিনি থাকতে চান জনগণের কাতারে। ব্যক্তিগত আত্মতৃপ্তি বিসর্জন দিয়ে তিনি দেশের মুক্তিকামী সকল শ্রেণীপেশার মানুষের গণতান্ত্রিক অবদানকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। দলীয় সংকীর্ণতার উর্ধ্বে ওঠে তিনি সকল রাজনৈতিক দলের ভিন্ন ভিন্ন অবদানের কথা উল্লেখ করেছেন।

নির্বাচিত হলে প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জনগণের। এটি তো আমার সিদ্ধান্ত না, এটি সিদ্ধান্ত নিবে বাংলাদেশের জনগণ। তাতে বুঝা যায় তিনি নিজেকে জনগণের ঊর্ধ্বে মনে করেন না, বরং তিনি বিশ্বাস করেন জনগণই সর্বোচ্চ ক্ষমতার উৎস।

দুর্নীতির প্রশ্নে মিথ্যা আশ্বাস ও বাগড়ম্ভরপূর্ণ বক্তব্য এড়িয়ে তিনি বলেন, জনগণ যদি আমাদেরকে সেই সুযোগ দেন, তাহলে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে আমরা যাতে এমন অবস্থা তৈরি করতে পারি যেখানে আমরা বহির্বিশ্বে অন্য দেশের সামনে সম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারি। এখানে ‘সুযোগ’ ও ‘চেষ্টা’ শব্দের ব্যবহার তাঁর অকৃত্রিম ও বাস্তব চিন্তারই প্রতিফলন ফুটে ওঠেছে। তাঁর কাছে আশ্বাসের ভিত্তি কোন ব্যক্তি নয় বরং জনগণের সমর্থন। দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলতার প্রশ্নে তারেক রহমান তাঁর জিরো টলারেন্স নীতির অবস্থান দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করেছেন।

তিনি আশ্বস্ত করেছেন অনৈতিক কাজে সম্পৃক্ত ব্যক্তি, দলের সমর্থন নয় বরং সোপর্দ হবেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নিকট। তিনি জোর দিয়ে বলেন আইন প্রয়োগের দায়িত্ব রাজনৈতিক দলের নয় বরং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান যেমন পুলিশ ও বিচার বিভাগের। দল ও মতের উর্ধ্বে উঠে যোগ্য নেতার মতোই তিনি ঘোষণা দিয়েছেন যে, অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়া দলীয় কর্মীকে অবশ্যই আইনের মুখোমুখি হতে হবে।

দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তিনি বিচারিক সমতা, প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার উপর জোর দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি ক্ষমতাসীন দলের ব্যর্থতা ও তাঁর দলের অতীত দুর্বলতাকেও সমালোচনা করতে কার্পণ্যবোধ করেননি।

সাবলীল ভাষা ব্যবহারকারী হাসিমুখের নেতার ইস্পাত দৃঢ়তা তখনই পরিলক্ষিত হয় যখন তার পরিবারের প্রতি অবিচার ও নির্যাতনের প্রসঙ্গ আনা হয়।

এক্ষেত্রে তিনি ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার পরিবর্তে জনগণের প্রতি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি মনে করেন খুনি হাসিনার বিচার শুধুমাত্র তার পরিবারের প্রতি অন্যায়ের কারণে নয় বরং হাজারো লক্ষ পরিবারের কান্না আর জিজ্ঞাসার জবাব দিতেই হতে হবে। তাঁর পরিবারের কাহিনী কে শুধুমাত্র নিজের নয় বরং মনে করেছেন সকল নির্যাতিত নিপীড়িত পরিবারের কাহিনী। এক্ষেত্রে তিনি বলেন, ‘এটি প্রতিশোধের বিষয় নয় এটি ন্যায়ের কথা, এটি আইনের কথা। অন্যায় হলে তার বিচার হতে হয়। কার সম্পর্কে কি মনোভাব সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়’। তারেক রহমানের বক্তব্য এটাই প্রমান করে, তিনি একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক, নীতিনিষ্ঠ ও জনগণকেন্দ্রিক নেতা।

তিনি বাংলাদেশের নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করা এবং সীমান্তে হত্যা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন। শক্তিশালী প্রতিবেশীর অন্যায় কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কথা বলে তিনি ন্যায় ও সত্যের পক্ষে দাঁড়ানোর নৈতিক সাহস প্রদর্শন করেছেন। তাঁর মতে একটি দেশের টিকে থাকার মূল ভিত্তি হলো জনগণের আস্থা ও সমর্থন। তাই তিনি মনে করেন বাংলাদেশকে সবসময় তার জনগণের পাশে থাকতে হবে। তিনি পররাষ্ট্রনীতিকে বাইরের প্রভাব বা নির্ভরতার পরিবর্তে স্বাধীন ও সার্বভৌমত্বকেন্দ্রিক করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি সংযত ও কূটনৈতিক ভাষায় ভারসাম্যপূর্ণ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বজায় রাখার গুরুত্বও তুলে ধরেছেন। সার্বিকভাবে তার বক্তব্যে একজন দূরদর্শী, স্বাধীনচিন্তক ও গণতান্ত্রিক নেতৃত্বের প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়। সত্যিকারের জাতীয়তাবাদী বলেই তাঁর কণ্ঠে দৃঢ়ভাবে উচ্চারিত হয়েছে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’।

তাঁর “বাংলাদেশকে অবশ্যই নিজ জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে” এই বক্তব্যটি একটি গণতান্ত্রিক ও জনগণকেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করে, যা জোর দেয় যে রাজনৈতিক বৈধতা আসে জনগণের কাছ থেকে, কোনো বিদেশি জোট থেকে নয়।

BBC বাংলার সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান নিজেকে একজন প্রাণীপ্রেমী হিসেবে উল্লেখ করেন, যা তাঁর মানবিক ও সহানুভূতিশীল নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিফলিত করে। তিনি বলেন, একজন নেতার প্রাণীর প্রতি আচরণ তার করুণা ও দায়িত্ববোধের পরিমাপ নির্ধারণ করে। প্রাণীপ্রেমের প্রসঙ্গে তিনি পরিবেশ সংরক্ষণের কথাও উল্লেখ করেন। কারণ প্রাণীর সুরক্ষা মানে প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। এভাবে তিনি প্রমান করেছেন যে রাজনীতির বাইরে তিনি একজন সংবেদনশীল মানুষ, যিনি জীবনের প্রতিটি রূপকেই মূল্য দেন।

তারেক রহমানের বিবিসির সাক্ষাৎকারে তিনি Allinclusive ডেমোক্রেসি বা সার্বজনীন গণতন্ত্রের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গণতন্ত্র মানে শুধু ক্ষমতায় যাওয়া নয়। আমাদের এমন একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যেখানে প্রতিটি নাগরিকের মতামত গুরুত্ব পায়, যেখানে সকল নাগরিক যে কোন রাজনৈতিক মতাদর্শ বা সামাজিক পরিচয় নির্বিশেষে সমানভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে। তিনি রাজনৈতিক বহুত্ববাদকে স্বাভাবিক ও প্রয়োজনীয় বলে উল্লেখ করেন এবং বলেন জামায়াতের আলাদা জোট গঠনের বিষয়টি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ। তাঁর বক্তব্যে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, অংশগ্রহণমূলক ও ন্যায় ভিত্তিক গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তোলার আহ্বান ছিল।

তারেক রহমানের রাজনৈতিক বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে জাতীয়তাবাদ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক মনোভাব একে অপরের পরিপূরক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, যদি জাতীয়তাবাদটি বহুত্ববাদ, সহনশীলতা এবং সমতার ভিত্তিতে গঠিত হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বুঝা যায় যে তিনি এক্সক্লুসিভ জাতীয়তাবাদের বিপরীতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয়তাবাদের পক্ষে। যেখানে রাজনৈতিক মতাদর্শ, ধর্মীয় গোষ্ঠী এবং সামাজিক শ্রেণী নির্বিশেষে সবাইকে জাতির অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তাঁর বক্তব্যে রাজনৈতিক বহুত্ববাদকে স্বাভাবিক ও প্রয়োজনীয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রের ভিত্তি গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। ফলে তারেক রহমানের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী আমরা বুঝতে পারি যে জাতীয়তাবাদ যদি নেতিবাচক না হয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়, তাহলে তা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে এবং সমাজে ঐক্য ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করতে পারে।

এই সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে তিনি শুধু নিজের রাজনৈতিক অবস্থান তুলে ধরেননি বরং এমন এক নেতৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছেন যা বাংলাদেশকে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক জবাবদিহিমূলক ও ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে পারে। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশে সূচনা হতে পারে একটি নতুন যুগের, যেখানে জনগণের স্বপ্ন, মতামত ও সম্ভাবনা হবে রাষ্ট্রের মূল চালিকাশক্তি। বলা বাহুল্য দীর্ঘ সময় পর গণমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়া তারেক রহমানের এই সাক্ষাৎকারে ফুটে ওঠে সামাজিক দায়বদ্ধ নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি। এতে দিকনির্দেশনা রয়েছে পরিবর্তনের। সাক্ষাৎকারটি তাই ব্যবহৃত হতে পারে একাডেমিক গবেষণার কার্যকর উৎস (Text) হিসেবে । এতে দিকনির্দেশনা রয়েছে পরিবর্তনের পথে নতুন আশা আর সম্ভাবনাময় দিগন্তের পথ।

লেখক:
চেয়ারম্যান, ইংরেজি বিভাগ ও
সাবেক ডিন, কলা অনুষদ,
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রধান নির্বাহী, সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ (একটি সামাজিক সংগঠন)।

আরও পড়ুন