রাজধানীর ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)-এর শিক্ষার্থী তানহা বিনতে বাশারের (২০) মৃত্যুর জন্য প্রেমিক সায়মনকে দায়ী করেছেন তার পরিবার। তানহার পরিবারের দাবী সায়মনের মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তিপেতে তাদের মেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। প্ররোচনাকারী সায়মনকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছেন তারা।
নিহত তানহা বিনতে বাশার কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কুসুমপুর গ্রামের আবুল বাশার ভূইয়ার মেয়ে। অভিযুক্ত প্রেমিক সায়মন কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার বনকরা গ্রামের মৃত হেলাল উদ্দিনের ছেলে। তারা দুই জনই ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)-এর শিক্ষার্থী।
এরআগে গত ৩ নভেম্বর বিকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি বাসা থেকে তানহা বিনতে বাশারের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
নিহতের সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সায়মন ও তানহার মধ্যে দীর্ঘ ৪-৫ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। কুমিল্লায় এইচএসসি পাশ করার পরে ইউল্যাবে ভর্তি হন সায়মন। পরে তানহাকেও ঢাকায় আসাতে চাপ প্রয়োগ করেন সে। এক পর্যায়ে তানহা এআইইউবিতে ভর্তি করান। কিছুদিন যাওয়ারপর তানহাকে ইউল্যাবে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করে সায়মন। কয়েক দিন যাওয়ার পর সায়মন অন্য মেয়ের সঙ্গেও প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এই নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এক পর্যায় শুরু হয় সম্পর্কের টানাপোড়ন। এরই মধ্যে তানহা সায়মনকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে সায়মন তা অস্বীকারে। এতে তাদের সম্পর্ক আরো খারাপ হয়ে ওঠে। এরপর তানহা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে এবং শেষপর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।
নিহত তানহার বাবা আবুল বাশার ভূঁইয়া বলেন, সায়মন ও তানহার প্রেমের সম্পর্ক কয়েক বছরের। আমরা জেনেছি কয়েক দিন আগে। সায়মন বেশ কিছুদিন ধরে আমার মেয়েকে মানসিকভাবে কষ্ট দিচ্ছিল। তার মানসিক নির্যাতন সইতে না পেয়ে সোমবার দুপুরে তানহা আমাকে ফোন করে জানায় সে শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং তার মন ভালো নেই, তাকে ঢাকা থেকে নিয়ে যেতে। এরই মধ্যে আমি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেই। বিকেল সাড়ে ৩টায় সে ফোন করে কান্নাকাটি শুরু করে এবং আমাকে বলছিল সায়মন আমার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করেছে, এটি মেনে নেয়া আমার পক্ষে কষ্টকর। ‘বাবা, আমার ভুল হলে ক্ষমা করে দিও।’ এরপর বিকেল সাড়ে ৫টায় বাসায় পৌঁছে দেখি মেয়ের গলায় ফাঁস লাগানো। সে আত্মহত্যা করেছে। আমি প্রশাসনের কাছে মেয়ে হত্যার বিচার দাবী করছি।
এ বিষয়ে জানতে সায়মনকে একধিকবার ফোনে করা হলেও তার ব্যবহৃত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে নিহতের বড় বোন নুসরাত জাহানের দাবী, সায়মন ও তানহার প্রেম ৪ বছরের। তার বাবা মারা গেছেন মাস খানেক আগে। বিষয়টি পারিবারিক ভাবে তারা জানতেন। এই মধ্যে তানহা বিয়ের জন্য চাপ দেন। বিষয়টি নিয়ে তানহার বাবা আবুল বাশারের সঙ্গে পরিবারিক ভাবে তাদের কথা হয়। সর্বশেষ গত ৩ নভেম্বর সকালে সায়মন ও তানহার কথা হয়। ওই সময়েও তানহা বিয়ের বিষয় নিয়ে কথা বলেন। এরই মধ্যে তানহা কেন আত্মহত্যা করেছে এটি আমাদের জানা নেই।
এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিক বলেন, এ ঘটনায় প্রাথমিকভাবে একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন। ময়নাতদন্ত শেষে মৃতদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আত্মহত্যার কারণ জানতে পুলিশ তদন্ত করছে। ফরেনসিক রিপোর্ট আসার পর বাকি আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে।



