কুমিল্লার চান্দিনায় সড়কের পাশে থাকা পুকুর থেকে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে অবৈধভাবে মাটি তোলার অভিযোগ উঠেছে। এতে সড়কের সুরক্ষা দেয়াল হুমকিতে পড়েছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি স্থানীয়দের।
স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার শুহিলপুর ইউনিয়নের শালিখা গ্রামের জাহাঙ্গীর কাজী বাড়িসংলগ্ন সড়কের সুরক্ষা দেয়াল ঘেঁষে ড্রেজিং করায় যেকোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে ওই দেয়ালসহ পাকা সড়ক। এতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে কয়েকটি গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থার।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইলিয়টগঞ্জ থেকে বড়াইয়াকৃষ্ণপুর সড়কের উজিরপুর এলাকায় যুক্ত হওয়া আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ উজিরপুর-রাগদৈল সংযোগ সড়কটি এক কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে পাকা করার কাজ চলছে। প্রকল্পটির অধীনে সড়কের পাশে থাকা কয়েকটি পুকুর থাকায় সুরক্ষা দেয়ালও ইতোমধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে।
শুক্রবার (৭ নভেম্বর) সরেজমিনে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সুরক্ষা দেয়াল ঘেঁষে পুকুরে ড্রেজার বসিয়ে মাটি তোলা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, ওই স্থান থেকে ড্রেজার দিয়ে মাটি তুলছেন জাহাঙ্গীর কাজীর ছেলে মোস্তফা কাজী। কয়েক দিন ধরে ওই স্থানে ড্রেজিং করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করা ছিল খুবই কষ্টের। সরকার কয়েকটি গ্রামের মানুষের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়ক সুরক্ষা দেয়ালসহ সড়কটি পাকা করার কাজ শুরু করে। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তফা কাজী সুরক্ষা দেয়ালের সঙ্গে ড্রেজিং করছেন। এতে যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে প্রায় চার লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা সুরক্ষা দেয়াল। সাথে সাথে পাকা সড়কটিও ধসে পড়তে পারে পুকুরে।
উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, কিছুদিন আগেই এলাকাবাসীর দুর্ভোগ দূর করতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কটি পাকা করার উদ্যোগ নেয়। বর্তমানে সড়কটিতে ইট, কংক্রিট ও বালু ফেলে উন্নয়ন কাজ চালানো হচ্ছে। এর আগে সড়কটি রক্ষায় একটি প্যালিসেডিং ওয়াল নির্মাণ করা হয়, যাতে বৃষ্টির পানি ও পুকুরের চাপ থেকে সড়কটি নিরাপদ থাকে।
শালীখা গ্রামের একাধিক বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ড্রেজার দিয়ে যেভাবে বালু বা মাটি তোলা হচ্ছে, তাতে সড়কের নিচে ফাঁপা হয়ে যাচ্ছে। সরকার কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক বানাচ্ছে, আর কয়েকজন লোক নিজেদের স্বার্থে সেটা ধ্বংস করছে। তারা বলেন, সড়কটি দিয়ে তাদের সন্তানরা স্কুলে যায়। সুরক্ষা দেয়াল ভেঙে গেলে সড়কটিও ভেঙে যাবে। তখন যানবাহন চলাচলই বন্ধ হয়ে যাবে। অবিলম্বে ড্রেজার অপসারণ ও বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মো. ইউসুফ ভূঁইয়া বলেন, রাস্তা ভেঙে গেলে আমাদের মতো চালকদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে। কারণ প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে বশিকপুর, রাগদৈল, সাচার ও জয়নগরসহ প্রায় ১০-১২টি গ্রামের সাধারণ মানুষ ও বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতা, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করি। কিছু লোক নিজের লাভের জন্য সেটা নষ্ট করছে। প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মোস্তফা কাজী বলেন, ‘আমি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছি না। আমার নিজস্ব পুকুর থেকে ঘরবাড়ি নির্মাণের জন্য বালু তুলছি। এতে রাস্তার কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই।’
এ ব্যাপারে চান্দিনা উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম বলেন, সড়কের পাশের পুকুর থেকে কেউ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলে অবশ্যই সড়কের স্থায়িত্বের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। সড়ক রক্ষা বাঁধের আশপাশে মাটি সরে গেলে সুরক্ষা দেয়াল দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ধসে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তিনি বলেন, বিষয়টি জানতে পেরেছি। আমরা মাঠ পর্যায়ে প্রতিনিধি পাঠিয়ে পরিস্থিতি যাচাই করা হবে। প্রয়োজনে উপজেলা প্রশাসনকে জানাব জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে।
চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আশরাফুল হক বলেন, অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। সড়কের নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি। এলজিইডি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত মাঠে তদন্তদল পাঠানো হবে। অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



