বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান, সাবেক এমপি ও মন্ত্রী কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ বলেছেন, ‘আমরা যদি ক্ষমতায় আসতে পারি যারা জেল খেটেছে। মামলা খেয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন তাদের প্রতিদান ইনশাআল্লাহ আমরা দেবো এবং তাদের সম্মানি দেয়া হবে।’
শনিবার (৮ নভেম্বর) বিকেলে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার শ্রীকাইল সরকারি কলেজ মাঠে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় কায়কোবাদ বলেন, ‘আমার কলিজা ঠান্ডা হয়ে গেছে আজকের শ্রীকাইলের মানুষের উপস্থিতি দেখে। আমি তো আপনাদের কামলা। মুরাদনগরের গরীব মহিলা পুরুষ হচ্ছে আমার নেতা। আমি তাদের কামলা হয়ে মুরাদনগরে আছি এবং থাকতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘আপনারা আমাকে পাঁচবার নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। তৃতীয় বার যখন নির্বাচন হয় তখন হাসিনা ছিল সরকার। সে ঢাকা থেকে বড় বড় সন্ত্রাসী এনেছিল নির্বাচন বানচাল করার জন্য। কিন্ত আল্লাহর রহমতে তারা কিছুই করতে পারে নাই।’
সাবেক এই এমপি আরো বলেন, ‘২০০১ সালে আপনারা আমাকে বিএনপি থেকে নির্বাচিত করেছেন। ২০০৮ সালে নির্বাচনের সময় আমি হজ্বে চলে যাচ্ছিলাম। তখন সবাই আমাকে জিজ্ঞেস করছিল আপনি চলে গেলে নির্বাচন করবে কে। তখন আমি বললাম পাস করানোর দায়িত্ব আমার আল্লাহর। তিনি আমাকে দেখবেন। তারপর আমি হজ্ব থেকে নির্বাচনের মাত্র ৮ থেকে ৯ দিন আগে ফিরে এসেছিলাম। ফিরে এসে মাত্র কয়েকটা ইউনিয়নে গিয়েছিলাম। আমার আল্লাহ আমাকে সেই নির্বাচনেও জয়ী করেছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘ভাইয়েরা আমার, এখন সামনে নির্বাচন আসছে। নির্বাচনকে ঘিরে একটি ইসলামী দল অংশ নিয়েছে এবং অনেক দল অংশ নিবে। সেখানে জামায়াতে ইসলামী বিভিন্ন জায়গায় বিএনপিকে নিয়ে নানা কথা বলে বেড়াচ্ছে। আমি জামায়াতকে প্রশ্ন করতে চাই, শেখ মুজিব যখন বাকশাল করে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করেছিল তখন আপনাদেরকে রাজনীতির সুযোগ দিয়েছিল কে? আপনাদের রাজনীতি করার সুযোগ ফিরিয়ে দিয়েছিল জিয়াউর রহমান। অথচ আপনারা এখন সেই বিএনপিকে নিয়ে মোনাফেকি করছেন, মোনাফেকি করা ঠিক নয়। ১৯৯৬ সালে তারা আওয়ামী লীগ এর সাথে মিশে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনে দিয়ে নিজেরাই বিপদে পড়েছিল। তাই ২০০১ সালে বেগম জিয়া তাদেরকে আমাদের সাথে এনে ১৮ টা সিট দিয়েছিল। যা এখন পর্যন্ত তারা কখনো পায় নাই। তারা এতটা অকৃতজ্ঞ হবে ভাবতেও পারি নাই। তাদের দুইজনকে মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব দিয়েছিলেন বিএনপি সরকার। এই সুযোগে তারা নিজেদের দলকে সংগঠিত করেছে।‘
কায়কোবাদ বলেন, ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে টর্নেডোর কারণে শ্রীকাইলে ৩টি ঘর উড়ে গিয়েছিল আমি লোক পাঠিয়ে তাদের সকল প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে দিয়েছিলাম। তাদের ঘর, কম্বল, হাড়ি-পাতিল, সব কিনে দিয়েছিলাম। তখন একজন আমার কাছে গিয়ে বললো, দাদা সবকিছু তো পাইলাম কিন্ত ১০ হাজার টাকা তো পাই নাই। যখন আমি বললাম, কিসের টাকা? আমি তো টাকা দেই নাই। পরে খবর নিয়ে শুনলাম একজন জামায়াতের রাজনীতি করে বলে তাকে জামায়াত থেকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছে আর কাউকে দেয় নাই। তখন আমি তাদেরকে বললাম, আপনারা একজনকে দিলেন, বাকিরা কি মুসলমান না.? তারা কোনো জবাব দিতে পারে নাই।‘
ভাইয়েরা, আপনারা সাবধানে থাকবেন, তারা অনেক কথা বলবে, অনেকভাবে বুঝানোর চেষ্টা করবে। তারা যখন ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করতে আসে তাদেরকে প্রশ্ন করবেন তারা কোরআন হাদিস অনুযায়ী চলে কিনা। তাদের পরিবারকে ইসলামী নিয়মে চালায় কিনা?
আমাদের মুরাদনগর থেকে শ্রীকাইল, বৃষ্ণপুর থেকে শ্রীকাইল, মেটাংগর থেকে শ্রীকাইল, এগুলা রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী ছিল, এগুলা আল্লাহ করাইছে আমার উছিলায়। বিগত ১৭ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা একটা রাস্তাও করে নাই। আমি ক্ষমতায় থাকতে প্রতি বছর টিয়ার দিয়েছিলাম, কিন্ত ১৭ বছরের টি আর গেল কই। সব মেরে দিয়েছে চোরের দলেরা।
আমাকে বরণ করার জন্য নিজেদের পয়সা খরচ করে আপনারা ১ লাখ মানুষ বিমানবন্দরে গিয়েছেন, আমাদের নেতা তারেক রহমানকেও আপনাদেরকে বরণ করে নিতে হবে।
আপনারা আগামী নির্বাচনে আমার মা বোনেরা, ভাইয়েরা, বাবারা, সকালে সকাল সকাল কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে প্রমাণ করবেন ধানের শীষ অতীতের চেয়েও বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছে।
আমি বিদেশে থাকতে আমাকে জন্ম দিয়ে লালন পালন করা আমার মায়ের জানাজায় থাকতে পারি নাই। কিন্ত আলহামদুলিল্লাহ আপনারা লক্ষাধিক মানুষ জানাজায় উপস্থিত হয়ে আমাকে শান্ত করেছেন।
আমাদের শ্রীকাইলের যে ভাইয়েরা বিগত ১৭ বছরে বিদায় নিয়েছে তাদের জন্য দোয়া করবেন। অসংখ্য নেতাকর্মী জেল খেটেছে। আল্লাহ তাদের উপর রহম করুন। ইনশাআল্লাহ শ্রীকাইলে আপনাদের কামলা হিসেবে আবারও আসব, মাটিতে লেটকা দিয়ে বসে আপনাদের সাথে কথা বলব।
মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন অঞ্জনের সভাপতিত্বে শ্রীকাইল ইউনিয়ন সেচ্ছাসবকদলের সদস্য সচিব নাজমুল হাসান ও শ্রীকাইল সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি এনামুল হকের সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন শ্রীকাইল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ইসহাক মুন্সী।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির কুমিলা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইঁয়া, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো: মোস্তাক মিয়া, কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আক্তারুজামান সরকার, সচিব এ এফ এম তারেক মু্ন্সী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কাজী জুন্নুন বসরী।



