কুমিল্লা
শনিবার,১৫ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০ কার্তিক, ১৪৩২ | ২৩ জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল

কুবিতে প্রাণহানির পরেও ঝুঁঁকি নিয়েই চলছে হল সম্প্রসারণের নির্মাণ কাজ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সম্প্রসারিত অংশের কাজ চলাকালীন সময়ে একের পর এক দুর্ঘটনার পরেও ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছেন শ্রমিকরা। প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সামগ্রী না দেওয়ায় এমন ঝুঁকিপূর্ণভাবে শ্রমিকরা কাজ করছে। এতে করে আবারও প্রাণঘাতি দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের।

 

সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণ কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরা হেলমেট, সেফটি বেল্ট, বুটসহ প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সামগ্রী ছাড়াই ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান থেকে এসব সামগ্রী সরবরাহ করার কথা থাকলেও তা না দেয়ায় মূলত তারা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন।

 

এছাড়া প্রতিনিয়ত নির্মাণাধীন এ ভবনের নিচ দিয়ে শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করেন। ভবনের নির্মাণ কাজে চার তলার ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চললেও ভবনের উপর থেকে চারপাশে সেফটি নেটের কোন ব্যাবস্থা নেই। এতে করে ছাত্র-ছাত্রীরাও যে কোন সময় বড় ধরণের দূর্ঘটনার শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

 

এদিকে গত ৩১ জানুয়ারি সারওয়ার হোসেন নামের এক শ্রমিক এই ভবনের কাজ করার সময় তিন তলা থেকে মাচা ভেঙ্গে নিচে পড়ে যান। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হলে ৪ ফেব্রুয়াারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানেই মারা যান। এর আগে গত ৩ ডিসেম্বর একই ভবনের কাজে করতে গিয়ে মুমিনুল নামের এক শ্রমিক চার তলা থেকে নিচে পড়ে যান। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। একের পর এক দুর্ঘটার কারণে শ্রমিকদের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছে।

 

বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মো: নূরুদ্দিন মোরশেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে নতুন কুমিল্লাকে বলেন, ‘সচেতন না হলে আরও দুর্ঘটনা ঘটবে। ভবনের চারপাশে সেফটি নেটের ব্যাবস্থা নেই। দুইটি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর আগে ছোটখাটো আরও অনেক ঘটনা ঘটেছে। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়া উচিৎ।’

প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সামগ্রী কেন শ্রমিকদের দেয়া হচ্ছেনা এমন প্রশ্নে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকেই দায়ী করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী এস. এম. শহিদুল হাসান নতুন কুমিল্লাকে বলেন, ‘শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা বারবার ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে বসেছি। শিক্ষার্থীরা যেহেতু ওই ভবনের নিচ দিয়ে যাতায়াত করে তাদেরও নিরাপত্তার বিষয় রয়েছে। তাছাড়া উপাচার্যসহ আমরা তাদের নিয়ে বসেছিলাম। এরপরেও নিরাপত্তা নিশ্চিত না করলে কঠোর ব্যাবস্থা নেয়া হবে।’

 

আবাসিক হলটির প্রাধ্যক্ষ মো: জিয়া উদ্দিন নতুন কুমিল্লাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যে রাস্তায় যাতায়াত করছে সেটি বন্ধের বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কে অনেক আগেই বলেছি। কিন্তু সে কথা শুনছে না। শিক্ষার্থীদের যাওয়া আসার জন্য বিকল্প রাস্তা আছে। কথা না শুনলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যাবস্থা গ্রহণের জন্য পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরকে বলা হয়েছে।’

 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো: মিলন নতুন কুমিল্লাকে বলেন, ‘নিরাপত্তা সামগ্রী আছে। কিন্তু শ্রমিকরা সেগুলো পরে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। এজন্য আমি বললেও তারা এগুলো ব্যবহার করছে না।’ সেফটি নেটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এই রাস্তায় কেউ আসা যাওয়া করার কথা নয়। আর সেফটি নেট অনেক ব্যয়বহুল। এজন্য আমরা ব্যাবহার করছিনা।’ এছাড়া ২-১ দিনের ভিতর ঝুঁঁকিপূর্ণ রাস্তাটি বন্ধ করা হবে বলে তিনি জানান।

 

শিক্ষার্থীরা ঝুঁঁকিপূর্ণভাবে নির্মানাধীন ভবনের নিচ দিয়ে যাতায়াত করলেও রাস্তা বন্ধ করছেনা কেন এমন প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো: আবু তাহের নতুন কুমিল্লাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যে রাস্তায় যাতায়াত করছে সেটি বন্ধ করে দেয়া হবে। আমি এখনই আবার বলে দিচ্ছি।’

আরও পড়ুন>> কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ভবনের ছাদ থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু

আরও পড়ুন