ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামের হায়দার পুল থেকে ফাল্গুনকরা মাজার এলাকা পর্যন্ত বিভাজকের সৌন্দর্যবর্ধনে লাগানো বকুল গাছগুলোতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) বেলা ১০টার দিকে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকার এসব গাছে আগুন দেওয়া হয়। পরে খবর পেয়ে বেলা ১১টায় ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে।
চৌদ্দগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান নতুন কুমিল্লাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, সোমবার রাতে সড়কের ফাল্গুনকরা মাজার থেকে হায়দার পোল এলাকা পর্যন্ত বকুল গাছের নিচে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে বকুল গাছগুলোর ডাল পালার বেশিভাগ অংশ পুড়ে যায়। সকাল ১০টার দিকে আবারও একই স্থানে আগুন দেওয়া হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌছে আগুন নেভায়।
এর আগে গত বছরের মার্চে সড়কের এই স্থানটিতে প্রায় অর্ধশতাধিক বকুল গাছে আগুন দেওয়া হয়। সেই সময়ে সড়ক ও জনপদ কুমিল্লা অঞ্চল আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথা থাকলেও রহস্যজনক কারণে তা থমকে যায়।
এদিকে সড়ক ও জনপদের (সওজ) কর্মকর্তারা বলছেন, স্থানীয়রা বাসিন্দারা বিভাজকে সবজি চাষ করতে গাছে আগুন দিচ্ছেন। অন্যদিকে বাসিন্দারা বলছেন, সওজের নিয়োগ করা পরিচ্ছন্নকর্মীরা লাগাচ্ছেন এই আগুন। এক পক্ষ অন্য পক্ষের ওপর দায় চাপানোর মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, এসব গাছে বারবার আগুন দেয় কারা?
স্থানীয়রা বলছেন, মহাসড়কের চার লেনের বিভাজকের মাঝখানে সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য লাগানো গাছগুলো পরিচ্ছন্ন রাখতে সড়ক ও জনপদ বিভাগ যেসব কর্মী নিয়োগ করেছেন, তারা সময় এবং পরিশ্রম কম করতে আগুন লাগিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে যাচ্ছেন। এতে করে সরকারের লাগানো এই কাজগুলো মারা যাচ্ছে।
সড়ক ও জনপদ সূত্র মতে, মহাসড়কটি ২০১৬ সালে চার লেনে রূপান্তর করার পর সৌন্দর্যবর্ধনের পাশাপাশি এক লেনের গাড়ির হেডলাইটের আলো যাতে অন্য লেনের গাড়ির ওপর না পড়ে, সেজন্য বিভাজকের ওপর লাগানো হয়েছিল বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।
মহাসড়কের বিভাজকটি কোথাও ফুল গাছ, আবার কোথাও অন্যান্য বৃক্ষ গাছ লাগানো হয়। কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে চট্টগ্রাম সিটি গেট পর্যন্ত প্রায় ১৯২ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে মহাসড়কের প্রায় ১৪৩ কিলোমিটার এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে।
এসব গাছের মধ্যে রয়েছে— বকুল, কাঞ্চন, করবী, গন্ধরাজ, রাধাচ‚ হৈমন্তী, টগর, সোনালু, কৃষ্ণচূড়া, কদম, পলাশসহ নানান ফুলের গাছ। এ রকম ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে ৫০ হাজারের বেশি। এ ছাড়া সড়কের পাশে এবং বিভিন্ন স্থানে বিভাজকের ওপর লাগানো হয়েছে জলপাই, অর্জুন, কাঁঠাল, মেহগনি, শিশু, আকাশমণি, নিম, একাশিয়া, হরীতকীসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৪০ হাজারের বেশি গাছ। কুমিল্লার বেলতলী এলাকাটি বকুলগাছে সাজানো হয়েছে।
চৌদ্দগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, থানা থেকে ফোন করে জানানো হয় মহাসড়কের মাঝখানে বিভাজকের ফাল্গুনকরা মাজার থেকে হায়দার পুল পর্যন্ত কে বা কারা আগুন দিয়েছে। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনি। গত বছরও এই স্থানে আগুন দিয়ে বেশ কিছু গাছ হত্যা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ, কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, মহাসড়কের পাশের বাসিন্দারাই বিভাজকের মাঝখানে সবজি চাষ করতে আগুন দিচ্ছে। আমরা এই ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নিব।
তবে নির্বাহী প্রকৌশলীর এই দাবিকে প্রত্যাখান করে আবু তাহের নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, গত সপ্তাহে সওজের পরিচ্ছন্নকর্মীরা এই বিভাজকের মাঝখানে কাজ করার সময় তাদের সময় ও পরিশ্রম বাঁচাতে আগুন লাগিয়ে আগাছা পরিষ্কারের কাজ করছে। যাতে ঝলসে যাচ্ছে গাছগুলো। অথচ দায় চাপানো হচ্ছে স্থানীয়দের ওপর। এ ঘটনা তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে আসল সত্য।
এরশাদ উল্লাহ নামে আরেক এক ব্যক্তি বলেন, আমরা নিজের জমি চাষাবাদ করার সময় পাই না। মহাসড়কের ওপরে কোন দুঃখে সবজি চাষ করতে যাব? প্রতিবছরই তো এই স্থানটিতে আগুন দেওয়া হয়। কারা আগুন দিচ্ছে সরকার তাদের কেন খুজে বের করছে না? কেন তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
চৌদ্দগ্রাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিলাল উদ্দিন আহাম্মেদ বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ফায়ার সার্ভিসকে বিষয়টি জানানো হয়। পরে তারা সেখনে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে।



